(২১ জুন, ২০১০) :: শিবচরের বিল পদ্মায় অন্তত ৬০টি নদীজোড়া আড়াআড়ি বাধ দিয়ে নির্বিচারে ডিমওয়ালা ও পোনামাছসহ সকল প্রজাতির মাছ নিধন শুরু হয়েছে। প্রকাশ্যে অবৈধভাবে মাছ নিধনের এ উৎসব চললেও যেন দেখার কেউ নেই। বিষয়টির সতত্যা স্বীকার করে বিস্ময়করভাবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দায়ভার চাপালেন জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের উপর।
একাধিক সূত্র জানায়, শিবচর ও মাদারীপুরের দক্ষিণ কোণে ও শিবচর পৌর এলাকায় বহমান ‘বিল পদ্মা’ বিলে স্রোত কম থাকায় নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে আড়িয়ালখাঁ নদ থেকে প্রতিবছর বর্ষায় অসংখ্য মা মাছ ডিম ছাড়তে আসে। এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বর্ষার শুরুতেই অন্তত ৬০টি নদী জোড়া আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে বিল পদ্মায় (ক ও খ বিলে) মাছ নিধন শুরু করেছে। এরমধ্যে বিল পদ্মা-খ-তেই অর্ধ শতাধিক ছোট-বড় বাঁধ রয়েছে। এক একটি বাঁধে কয়েক বাঁশ গেড়ে মশারি,ছালা বা কারেন্ট জাল দিয়ে ঘেরা। নিচে মাছ আটকানোর ফাঁদ দোয়াইর ও বরশি। বাঁধগুলোর কোনটি বিলের মাঝামাঝি আবার কোনটি সম্পূর্ণ বিলজুড়ে রয়েছে। ফলে চিংড়ি, রুই, কাতলা, আইড়, পাঙ্গাস বোয়ালের মা মাছ ও পোনাসহ সকল মাছ আটকা পড়ছে। বাঁধগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে ছালা জাল। অথচ সাড়ে ৪ সেন্টিমিটার ফাঁসযুক্ত জালের নিচে জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ। তাছাড়া প্রতিবন্ধকতামূলক বাঁধ আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রয়েছে।
সেখপুরের ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘এই বিলে সাধারণ মানুষ কেউ মাছ ধরতে পারে না। যাগো টাহা আছে তারা বান দেয়।’
বাঁশকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মৎস্য কার্যালয়ের লোকজন সবসময়ইতো আসা যাওয়া করে। তারা দেখেওতো কিছু বলে না। তাহলে আমাদের কি বলার আছে?’
বিল পদ্মা-খ-এর ইজারাদার জয়নাল সিপাহি বলেন, ‘প্রাকৃতিক মাছ এই সময় আড়িয়াল খাঁ থেকে বিলে উঠে তাই সব বাঁধই নদীর আধা আধি। মাছ নামার সময় অর্থাৎ আশ্বিন মাস থেকে নদীজোড়া বাঁধ দেয়া হয়। বৃটিশ আমল থেকেই এভাবে চলছে। প্রতি বাঁধ বাবদ জেলেরা আমাদের দেড়-দু’হাজার টাকা দেয়। এখন এই বাঁধ দিয়ে শুধু চিংড়ি মাছ ধরা হচ্ছে।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুল মামুন বলেন, ‘বিল পদ্মা ক ও খ বিল দু’টি প্রায় ৭ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছে ইজারাদার। প্রতি বছরই ইজারা হার ১০ ভাগ বাড়ে। এই টাকা পুষিয়ে নিতেই ইজারাদাররা বাঁধসহ বিভিন্ন উপায়ে মাছ ধরে থাকে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. এ.কে.এম আমিনুল বলেন, ‘চর দখলের মতো বিল পদ্মায়ও অবৈধ বাঁধ বসেছে। কিন্তু বাঁধ অপসারণের কাজ জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের, মৎস্য দপ্তরের নয়। আমরা তাদের আগেও জানিয়েছি। আবারও জানাবো।’

0 মন্তব্য(সমূহ):
Post a Comment