সাইট উন্নয়নে আপনাদের লেখা ও পরামর্শ চাচ্ছি-সম্পাদক

শিবচর-মাদারীপুর সড়কে গাছ কাটার মহোৎসব ॥ অপ্রশস্ত সড়ক প্রশস্তের নামে প্রশস্ত সড়কেরই গাছ নিধন

07 May 2010 :: 12:25 pm
মাদারীপুর-শিবচর সড়কে গাছ কাটার মহোৎসব শুরু হয়েছে। সড়ক প্রশস্ত করার জন্য অপ্রশস্ত সড়কের বাধা সৃষ্টিকারী গাছ কাটার কথা থাকলেও প্রশস্ত সড়কের গাছ কেটে নেয়া হচ্ছে। তাও আবার প্রশস্ত সড়কের পাশের অনিরাপদ গাছ রেখে কাটা হচ্ছে নিরাপদ দূরত্বের মোটা গাছগুলো।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ঠিকাদার ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, পাঁচ্চর-শিবচর-মাদারীপুর সড়কের ১৮তম কিলোমিটার অংশ হতে ৩৪তম কিলোমিটার অংশ পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে সড়ক ১২ ফুট থেকে ১৮ ফুট প্রশস্তকরণে বাধা সৃষ্টিকারী বৃক্ষাদি অপসারণকল্পে নিলাম দেয়া হয়। ঢাকার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদের কার্যালয় থেকে মোট ১৬টি ভাগে ১৫২টি গাছ ১৫ দিনের মধ্যে অপসারণের দায়িত্ব দেয়া হয় ৭ জন ঠিকাদারকে। প্রথম গ্রুপের ৯টি গাছ ৫০ হাজার ৮শ ৮০ টাকা, দ্বিতীয় গ্রুপের ১০টি গাছ ৪৭ হাজার ৯শ ৪০ টাকা, তৃতীয় গ্রুপের ১২টি গাছ ৪৯ হাজার ৯শ ৫৮ টাকা, চতুর্থ গ্রুপের ২০টি গাছ ৪৮ হাজার ৬৪ টাকাসহ ১৬টি গ্রুপে গাছগুলো নিলাম হয়। ইতোমধ্যে গত বুধবার থেকে শিবচরের বাঁশকান্দি ইউনিয়নে শেখপুর অংশে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কে প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রুপের গাছগুলো অপসারণ শুরু হয়েছে। গাছগুলোও সড়কটি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার পরও গাছগুলো কর্তন করায় ও সব গাছগুলো পানির দরে বিক্রি করায় এলাকাবাসীসহ জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের মাঝেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অথচ বিস্ময়ের বিষয় দরপত্রে সড়ক প্রশস্তকরণের ক্ষেত্রে গাছ অপসারণের কথা উল্লেখ থাকলেও ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কেই চলছে গাছ নিধন। 
সরেজমিনে সড়কটির শেখপুর শিকদারকান্দি সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মোট ২৩ জন শ্রমিক ৩ ভাগে ভাগ হয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রপের গাছগুলো অপসারণ করছে। ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কের অংশে ৯ ও ১০ নং গাছ (লাল কালির চিহ্ন সম্বলিত) দুটি নিরাপদ দূরত্বে নদীর দিকে হেলে থাকতে দেখা গেলেও গাছগুলোকে সড়কটির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা  করে কাটা হচ্ছে। এছাড়াও ৭ নং চিহ্ন সম্বলিত শিশু গাছসহ অধিকাংশ গাছগুলো ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কের নিরাপদ দূরত্বে থাকলেও গাছগুলো কর্তন করা হচ্ছে। ৭নং গাছটিসহ অধিকাংশ কর্তনকৃত গাছগুলোর পার্শ্ববর্তী চিকন গাছগুলো সড়কটির অনিরাপদ দূরত্বে থাকলেও বেছে বেছে পুরাতন ও মোটা গাছগুলোই কর্তন করা হচ্ছে। এতে এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শিকদারকান্দি গ্রামের মোতালেব খান বলেন, সড়ক ১৮ ফুট করবো তাই গাছ কাটতাছে। কিন্তু শেখপুর ব্রিজের পর সামনের মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তা ১৮ ফুটই আছে। তারপর এই গাছগুলা কাটে কেন? গাছগুলাতো হেইলা আছে নদীর দিকে রাস্তার সমস্যা কি? আসল কথা হইলো শিশু গাছ, কড়ই গাছ, মেহগিনি গাছগুলা মোটা হইছে সারও হইছে। এইজন্য হেগো নজর লাগছে। নাইলে রাস্তার ভেতরের চিকন গাছ থুইয়া রাস্তার বাইরের মোটা গাছ কাটবো কেন!
স্থানীয় এলাকাবাসী মজিবর, রবিউলসহ অনেকে ক্ষোভের সাথে বলেন, রাস্তা বাড়ানোর নাম করে সড়ক-ঘেষা গাছগুলো না কেটে নিরাপদ দূরত্বে থাকা মোটা ও বড় গাছগুলো দেদারসে কাটা হচ্ছে। যার এক একটির মূল্য কম করে ২৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। অথচ টেন্ডারে ১০-১২টি গাছের দাম ধরা হয়েছে ৪৫ থেকে ৫২ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাঁশকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, শেখপুর সেতুর পর ইটভাটা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত। এ অংশে একটি মরা শিশু গাছ ছাড়া বাকি কোন গাছই সড়কটির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক মো. আলীম বলেন, আমরা ২৩ জন শ্রমিককে ১ হাজার সিএফটি কাঠ কাটার চুক্তিতে আনা হয়েছে। ১ হাজার সিএফটিতে অন্তত ২শ গাছ হবে।
গাছ কাটা শ্রমিকদের ঠিকাদার মো. সরোয়ার বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের দেখিয়ে দেয়া গাছগুলোই কাটা হচ্ছে। বাকি কিছু বলতে পারব না।
নিলামে ৬টি গাছের গ্রুপ ক্রয়কারী ঠিকাদার লিটন শিকদার বলেন, সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আমরা ৭ জন ঠিকাদার এই সড়কের ১৬টি গ্রপের ১৪৫ অথবা ১৫২টি গাছ ক্রয় করেছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের মার্কিং করা গাছই কাটছে ঠিকাদাররা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বরত উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. ফেরদৌস বলেন, সড়কটির ১৮তম কিলোমিটার থেকে ৩২ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কে ১২ ফুট থেকে ১৮ ফুট প্রশস্তকরণে বাধা সৃষ্টিকারী ১৫২টি গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে কাটা শুরু হয়েছে। তবে সড়কটির স্বার্থেই ১৮ ফুট প্রশস্ত শেখপুর এলাকার ১ কিলোমিটার ও সাদীপুর অংশের দেড় কিলোমিটার এলাকার বেশকিছু গাছও কাটা হচ্ছে। এরমধ্যে শেখপুরের মসজিদ সংলগ্ন ২/৩টি গাছ নিরাপদ দূরত্বে থাকা সত্বেও মুসল্লীদের অনুরোধে কাটা হচ্ছে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের হলেও গাছ কাটার সময় উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করতে হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা তা করেনি। আমার কাছেও বিষয়টি নিয়ে নানান অভিযোগ এসেছে। কিন্তু গাছগুলো সওজ-এর হওয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারছি না।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আ. রেজ্জাক বলেন, মূলত গাছ কাটতে হবে ১২ ফুট প্রশস্ত সড়ক অংশে। তবে কোন গাছ ১৮ ফুট অংশে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সেই গাছ কাটতে পারে।
Read More ... »
Widget By Devils Workshop
 

আজকের চাঁদ

CURRENT MOON

© 2009-2010 shibcharsangbad | Design by: Md. Abul Hossain Miah

^ উপরে আসুন