সাইট উন্নয়নে আপনাদের লেখা ও পরামর্শ চাচ্ছি-সম্পাদক

১০০-১০০ প্রতিনিধিত্বে নারীর গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন চাই

নূর-উর-নাহার মেরী, মুশতারী বেগম ও লাভলী ইয়াসমিন


এদেশের নারী মুক্তি আন্দোলনে বেগম রোকেয়ার অবদানকে মাইলফলক হিসেবে দেখা হয়। তিনি নারীদের অধিকার সচেতন হওয়ার জন্য প্রথমে শিক্ষা অর্জনের কথা বলেছেন। তৎকালীন সময়ে তিনি স্বপ্ন দেখতেন, বাংলার মেয়েরা লেখাপড়া শিখে পুরুষদের মতো জজ, ব্যারিস্টার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবেন এবং ভাইসরয় পদে বসে দেশ শাসনও করবেন। তার ঐ স্বপ্ন যে আকাশ-কুসুম ছিল না প্রায় শতাব্দীকালের পরিক্রমায় সর্বক্ষেত্রে মেয়েদের পদচারণায়, তা অনেকটাই বাস্তব রূপ লাভ করেছে। বর্তমানে এদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রীও একজন নারী। সে সঙ্গে প্রশাসনে, পুলিশ বাহিনীতে এমনকি সেনাবাহিনীতেও মেয়েরা অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করেছে। কিন্তু ‘রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে’ মেয়েরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সে জন্য মেয়েদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দাবিটি এখন অত্যšত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বিভিন্ন সভা-সেমিনারে নারীদের ক্ষমতায়নের কথা বলেছেন। বিভিন্ন এনজিও ও নারীবাদী সংগঠন মেয়েদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিভিন্ন ফর্মূলা দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের দাবিসমূহে নানান দূর্বলতা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। সেজন্য ‘এমপো বাস্তবায়ন ফোরাম বাংলাদেশ’ এর অšতর্ভূক্ত ২৫টি সংগঠন ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য তথা কেন্দ্রে, বিভাগে, নগরে, জেলায়, উপজেলায় ও ইউনিয়নে সমমর্যাদায় ১০০:১০০ প্রতিনিধিত্বে নরনারীর ‘গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন’ সুনিশ্চিত করার জন্য লাগাতার ক্যাম্পেইন করে আসছে। সেই ক্যাম্পেইনেরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গক্রমেই উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, নারীদের “রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন” শব্দবন্ধটির পরিবর্তে “গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন” শব্দবন্ধটি এখন সর্বত্র অধিকতর গুরুত্ব ও মর্যাদা পাচ্ছে। কেন না, গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের মধ্যে অবশ্যই রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন থাকছে, কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মধ্যে গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন নাও থাকতে পারে। তার উদাহরণ অগণতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর দিকে নজর দিলেই পাওয়া যাবে। আবার “রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন” শব্দবন্ধটি অগণতান্ত্রিক মহলে বেশ আদরণীয়, কেন না এর ব্যবহারের মাধ্যমে তারা অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা দখলে নেয়ার ও রাখার যৌক্তিকতা আড়াল করার প্রয়াস পান। তাই, এমপো বাস্তবায়ন ফোরাম বাংলাদেশ ও সিডিএলজি’র পক্ষ থেকে প্রকাশিত সব ধরনের লেখায় “রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন” শব্দবন্ধটির পরিবর্তে “গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন” শব্দবন্ধটি বরাবরই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতে, আশা করা যায়, সমাজের অন্যান্যরা তাদের কথায় ও লেখায় এর ব্যবহার বৃদ্ধিতে অনুপ্রাণিত হবেন। ঠিক যেমনি “গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার” ও “গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্থানীয়করণ” শব্দবন্ধদ্বয়ের ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

যাহোক, উপমহাদেশে মেয়েদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ইতিহাস বেশ পুরনো নয়। বৃটিশরা শাসন পরিচালনায় এদেশের রাজনীতিকদের সম্পৃক্ত করতে ১৮৬১ সালে প্রণীত হয় ভারতীয় কাউন্সিল আইন। ১৮৬২ সালে গঠিত হয় বঙ্গীয় আইনসভা। তখন সীমিত ভোটাধিকারের ভিত্তিতে আইনসভায় সদস্য নির্বাচিত করা হতো। তৎকালীন বঙ্গীয় আইনসভায় ১২ জন সদস্যের মধ্যে কোনো নারী সদস্য ছিলেন না। তবে ১৯৪৭-১৯৫৪ সালের পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে ১৭১ জন সদস্যের মধ্যে সর্বপ্রথম ২ জন নারীকে সদস্য নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৪-৫৮ সালে পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদে ১২ জন নারী নির্বাচিত হন। ১৯৬২-৬৫ সময়কালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে ৫টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩-৭৫ সময়কালে প্রথম জাতীয় সংসদে ১৫টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত হয়। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ (১৯৭৯-৮২) ও তৃতীয় জাতীয় সংসদ (১৯৮৬-৮৭) এ ৩০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়; ১৯৮৬-৮৭ মেয়াদের সংসদে সর্বপ্রথম বিরোধী দলীয় নেতার পদে নারী হিসেবে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হন। চতুর্থ জাতীয় সংসদ (১৯৮৮-৯০) তে নারীদের জন্য কোনো আসন সংরক্ষণ করা হয়নি। তবে পঞ্চম জাতীয় সংসদ (১৯৯১-৯৬), ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ (১৯৯৬-৯৬) ও সপ্তম জাতীয় সংসদ (১৯৯৬-২০০১) এ প্রতিবার নারীদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষিত রাখা হলেও অস্টম জাতীয় সংসদে (২০০১-০৬) নারীদের জন্য কোনো আসন সংরক্ষিত ছিল না। চলতি নবম জাতীয় সংসদে ৪৫ জন নারী সংরক্ষিত আসনে এবং ১৯ জন নারী সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু সংরক্ষিত আসন পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদে নারীদের প্রকৃত ক্ষমতা ও মর্যাদা যে একদম প্রতিষ্ঠিত হয়নি তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে স্থানীয় সরকারেও সংরক্ষিত ব্যবস্থায় নারীদের প্রতিনিধিত্বের শুরু বেশীদিনের নয়। বর্তমানে সংরক্ষিত আসন হিসেবে ইউনিয়নে, পৌরসভায় ও নগর কর্পোরেশনে প্রতি তিন ওয়ার্ডে (ইউনিয়নে মেম্বার ও শহরে কাউন্সিলর পদে) একজন নারী প্রতিনিধি নির্বাচকমন্ডলীর ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, সংরক্ষিত আসনের এই ধারায় ‘নারীদের ক্ষমতায়ন’ অব্যাহত থাকলে পুরুষদের সমকক্ষ হতে তাদের আরও ১০০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। সেজন্য ‘এমপো বাস্তবায়ন ফোরাম বাংলাদেশ’ মনে করে, ১০০:১০০ প্রতিনিধিত্বে নর-নারীর গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের ফর্মূলাটি কেন্দ্রে, বিভাগে, নগরে, জেলায়, উপজেলায় ও ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হলে অত্যন্ত অল্প সময়ে বলা যায় আগামী এক দশকের মধ্যেই প্রকৃত ক্ষমতা ও মর্যাদায় বাংলাদেশের নারীরা প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে পুরুষদের পর্যায়ে উন্নীত হয়ে যাবেন। 

বাংলাদেশে একটি মাত্র সরকার রয়েছে, যার নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’। তার বিপরীতে ‘স্থানীয় সরকার’ নামে আরেকটি ব্যবস্থা থাকলেও তা স্বশাসিত. স্বাবলম্বী কোনো ‘গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা’ নয়। প্রকৃতপক্ষে এগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের বর্ধিত শাখা বা এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। সেজন্য দুই প্রকারের সরকার ব্যবস্থা অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় তৃণমূলে ‘গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্থানীযকরণ’ এবং নারীদের ‘গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন’ করা খুবই জরুরী প্রয়োজন। ণতন্ত্রায়ন ও স্থানীয় সরকার গবেষক এবং সিডিএলজি’র নির্বাহী পরিচালক আবু তালেব ‘গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা’য় ১০০:১০০ প্রতিনিধিত্বে নারীদের গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের জন্য মিলেনিয়াম প্রোপোজাল পার্ট ওয়ান (এমপো) এর আলোকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ১১ দফা সুপারিশ উপস্থাপিত করেন। এমপো প্রস্তাবনা ও উক্ত ১১ দফা সুপারিশের পক্ষে দেশে-বিদেশে ব্যাপক জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যেই গঠন করা হয় ‘এমপো বাস্তবায়ন ফোরাম বাংলাদেশ’ যা ২৫টি সংগঠনের একটি একতাবদ্ধ মোর্চা। আমরা আশা করি এই মোর্চার সদস্য সংগঠনের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকবে এবং আমাদের ন্যায়সংগত আন্দোলনও বেগবান হতে থাকবে ।

এখানে সংক্ষেপে ১১ দফা সুপারিশ প্রণয়নের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করা প্রয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় আইনসভা হচ্ছে এক কক্ষ বিশিষ্ট যা “জাতীয় সংসদ” নামে পরিচিত। জাতীয় সংসদের সাধারণ ও সংরক্ষিত আসন পদ্ধতিদ্বয়ের পরিবর্তে একই পদ্ধতিতে প্রতি আসনে দুইজন সদস্য নির্বাচনের প্রস্তাব ১১ দফার ১ নং দফায় করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের এক আসনে নারী ও পুরুষ উভয়ে একই পদ্ধতিতে নির্বাচিত হলে নারী সদস্যকে নিয়ে উপহাস করার আর কোনও সুযোগই থাকবে না। জাতীয় সংসদ পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণ পদ্ধতিগতভাবে সুনিশ্চিত করার জন্য ১১ দফার ২ নং দফায় একজন মহিলা ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করার প্রস্তাব করা হয়। পৌরসভাগুলি ও ঢাকা নগর কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর জেলা পরিষদের নির্বাচনের কথা শুনা যাচ্ছে। আমাদের দাবী হচ্ছে বিভাগকেও নির্বাচিত প্রতিনিধির অধীনে আনতে হবে। এর জন্য সর্বাগ্রে সরকারের একটি সমন্বিত স্তরগত নীলনকশা প্রণয়ন করতে হবে এবং বিভাগকে স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ইউনিট এবং ৪,৫০১টি ইউনিয়ন ও ৩১৬টি নগরকে স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন ইউনিট ধরে প্রশাসনিক ইউনিটগুলি সাজাতে হবে। সেই সাথে প্রতিটি ইউনিটকে গণতন্ত্রের ভিত হিসেবে স্ব-শাসিত, স্বাবলম্বী করতে ‘গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা’ বাস্তবায়ন করতে হবে। অর্থাৎ বিভাগে বিভাগীয় সরকার, জেলায় জেলা সরকার, উপজেলায় উপজেলা সরকার, ইউনিয়নে ইউনিয়ন সরকার এবং ৩১৬টি শহরে সেকেলে পৌরসভা ও নগর কর্পোরেশন পদ্ধতিদ্বয় বাতিল করে একরূপ ৩১৬টি নগর সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে এসব স্থানীয় সরকারে ক্ষমতার বিভাজন নীতি অনুসারে সরকারের তিনটি বিভাগ তথা স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ ও স্থানীয় আদালতের উপস্থিতি নিশ্চিত থাকতে হবে। যেমন, দেশের ৪,৫০১টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন সংসদ, ইউনিয়ন প্রশাসন ও ইউনিয়ন আদালত এবং ৩১৬টি নগরে নগর সংসদ, নগর প্রশাসন ও নগর আদালত থাকতে হবে। স্থানীয় সরকারের প্রতিটি স্তরে সমমর্যাদায় ১০০:১০০ প্রতিনিধিত্বে নারীদের গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করতে ১১ দফা সুপারিশের ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯ নং দফায় একদম নির্দিষ্ট করে প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার, কেউ কেউ জাতীয় স্তরে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় আইনসভা স্থাপনের কথাও বলছেন। যদি কখনও জাতীয় আইনসভার উচ্চ কক্ষ গঠিত হয় ১১ দফার ১০ নং দফায় সে উচ্চ কক্ষের নাম ‘জাতীয় সভা’ করার এবং প্রতি জেলা থেকে একজন মহিলা জাতীয় সভাসদ ও একজন পুরুষ জাতীয় সভাসদ সরাসরি ভোটে নির্বাচিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে, এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রেও যথাসম্ভব নারীদের গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের নীতির কথা ১১ নং দফায় সাধারণভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেরকম ব্যবস্থা গৃহীত ও বাস্তবায়িত হলে নারীরা নিজেরা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারে অবস্থান করেই যেসব প্রথাগত বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন সেসবের অবসানে প্রয়োজনীয় আইন, বিধি-বিধান ও কর্মসূচী প্রণয়ন ও কার্যকর করতে সক্ষম হবেন। সংসদ ছাড়াও নারীদের ভাইস চেয়ারপার্সন, ডেপুটি মেয়র, ডেপুটি স্পিকার পদেও ১০০:১০০ প্রতিনিধিত্বে গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া, চেয়ারপার্সন, মেয়র, স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির প্রধান, প্রেসিডেন্ট এসব পদ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এসব পদে নারী-পুরুষ উভয়ে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন বলে নারীদের সার্বিক অর্থে সক্ষমতা অর্জনের মানদণ্ড বিচারের সুযোগও থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এমপো’র প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে নারী-পুরুষ উভয়কে একে অপরের অধীনস্থ না করে পরিপূরক ও সহায়ক করা হয়েছে। অর্থাৎ এই পদ্ধতির মাধ্যমেই একুশ শতকের উপযোগী একটি উন্নত গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে; একে অবশ্যই একটি একতাবদ্ধ মানবজাতি গঠনের উপায় হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। ‘এমপো’র আলোকে বাংলাদেশের নারীদের অতীত ও বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রণীত এই ১১ দফা সুপারিশ হলো: ১. জাতীয় সংসদের প্রতি আসনে একজন নারী সংসদ সদস্য ও একজন পুরুষ সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে হবে; দুই. জাতীয় সংসদে একজন মহিলা ডেপুটি স্পিকার ও একজন পুরুষ ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করতে হবে; ৩. ইউনিয়নের প্রতি ওয়ার্ডে একজন মহিলা মেম্বার ও একজন পুরুষ মেম্বার নির্বাচিত করতে হবে; ৪. ইউনিয়নে একজন মহিলা ভাইস চেয়ারপার্সন ও একজন পুরুষ ভাইস চেয়ারপার্সন নির্বাচিত করতে হবে; ৫. পৌরসভা ও নগর কর্পোরেশনের প্রতি ওয়ার্ডে একজন মহিলা কাউন্সিলর ও একজন পুরুষ কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে হবে; ৬. প্রত্যেক পৌরসভা ও নগর কর্পোরেশনে একজন মহিলা ডেপুটি মেয়র ও একজন পুরুষ ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত করতে হবে; ৭. এমপো অনুযায়ী উপজেলায় নির্বাচিত একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে; ৮. উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় সংসদের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা হতে একজন মহিলা সদস্য ও একজন পুরুষ সদস্য নির্বাচিত করতে হবে; ৯. জেলা ও বিভাগে একজন মহিলা ভাইস চেয়ারপার্সন ও একজন পুরুষ ভাইস চেয়ারপার্সন নির্বাচিত করতে হবে; ১০. জাতীয় সভা গঠনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক জেলা হতে একজন মহিলা জাতীয় সভাসদ ও একজন পুরুষ জাতীয় সভাসদ নির্বাচিত করতে হবে; এবং ১১. এমপোর আলোকে রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ১০০:১০০ প্রতিনিধিত্বে নারী-পুরুষের গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করতে হবে।

বলা হয়, নারীর দাসত্ব শুরু হয়েছে দাস প্রথা চালুরও পূর্বে। মাতৃতন্ত্র থেকে পিতৃতন্ত্রে প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে নারীর উপর পুরুষের আধিপত্য প্রাতিষ্ঠানিকতা লাভ করে। পরবর্তীকালে নারীর প্রতি যাবতীয় অন্যায়Ñঅবিচারকে সৃষ্টিকর্তা ও প্রকৃতি প্রদত্ত আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যান্য দেশের মত এই উপমহাদেশেও এসব আইন দ্বারা নারীর উপর নানা প্রকার নির্যাতনকে সমর্থন দেয়া হয়। পূর্বে সতীদাহ প্রথা, কন্যা শিশু হত্যা, কুমারী পণ প্রথা, শিশু বিবাহ, সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত রাখা ইত্যাদি কঠোরভাবে চালু ছিল। বর্তমানে এসব প্রথার রূপ পাল্টেছে মাত্র। স্বামীর গৃহে নির্যাতিত হওয়া, অফিস আদালত ও রাস্তাঘাটে নিগৃহীত হওয়া, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হওয়া, পুরুষের চেয়ে কম পারিশ্রমিক পাওয়া, প্রেমিক কর্তৃক প্রতারণা, এসিড সন্ত্রাসের শিকার হওয়া, হত্যা-ধর্ষণের শিকার হওয়া ইত্যাদি প্রতিদিনকার খবর। সম্প্রতি এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘ইভ টিজিং’ নামক মহামারী রোগ। এসব অনাচার চলতে পারছে কেবল গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মেয়েদের দুর্বল অবস্থানে রাখার কারণে। সেজন্য এমপো অনুযায়ী প্রণীত ১১ দফা সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে এসব ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে এবং নারী-পুরুষ উভয়ের উপযোগী একটি একতাবদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে দেশটি যাত্রা শুরু করবে, তাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশও অনুপ্রাণিত হবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে। এরফলে একদিন না একদিন প্রতি বছর ‘বিশ্ব নারী দিবস’ পালন করার পরিবর্তে ‘বিশ্ব মানুষ দিবস’ পালন করার সুযোগও সৃষ্টি হবে বলে আমরা মনে করি।

তৃণমূলে স্থানীয় সরকার পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণ ও অবদান রাখার গুরুত্ব বর্ণনায় এ্যনি ফিলিপস্ বলেছেন, ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার জন্য নারীরা খুব ভালোভাবে প্রস্তুত। স্থানীয় বিষয়ে তাদের বিশেষ স্বার্থ রয়েছে। তাঁরা স্থানীয় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ব্যবস্থা, শিশু পালন, বিভিন্ন সেবাখাত এবং পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখেন। এসব বিষয় স্থানীয় সরকারের দায়িত্বের অšতর্ভূক্ত বলে স্থানীয় সরকার পরিচালনায় নারীদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাইলে সকল স্থানীয় নির্বাচনের আগেই সমমর্যাদায় ১০০:১০০ প্রতিনিধিত্বে নরনারীর গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের সুপারিশগুলো বাস্তব রূপ দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। বিশেষ করে তৃণমূলে গ্রামীণ এলাকার ৪,৫০১টি ইউনিয়নে এবং নগরীয় এলাকার ৩১৬টি শহরে এই পদ্ধতিটি (১১ দফা সুপারিশের ৩, ৪, ৫ ও ৬ নং দফা) পাইলট প্রকল্প হিসেবেও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে পারেন। যদিও ইতোমধ্যে ১১ দফার ২নং দফা অনুসারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতে একজন মহিলা ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন (আমরা মনে করি এটি চলতি জাতীয় সংসদে এখনই কার্যকর করা যেতে পারে) এবং সে সঙ্গে অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের’ কথা বলছেন; আশা করি, এমপো’র আলোকে উপজেলায় নির্বাচিত ৪৮১ জন মহিলা ভাইস চেয়ারপার্সন ও ৪৮১ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারপার্সন তঁাঁদের প্রকৃত ক্ষমতা ও দায়িত্বও বুঝে পাবেন (১১ দফা সুপারিশের ৭ নং দফা)। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এসব আকাঙ্খার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেই বলব নারী সমাজের গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের আকাঙ্খা কেবল এমপো অনুযায়ী প্রণীত ১১ দফার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই পূরণ করা সম্ভব। এমপো বাস্তবায়ন ফোরাম বাংলাদেশ আরও বিশ্বাস করে, ১১ দফা সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকেই নারীর গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের একটি মডেল কান্ট্রি হিসেবে বিশ্বে বিশাল মর্যাদা ও সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হবে; যার মধ্যে নোবেল পুরস্কারের মতো মহাসম্মানীয় মর্যাদাবান সুনাম অর্জনও হতে পারে বইকি। সম্মানিত সুধীবৃন্দ, এমপো বাস্তবায়ন ফোরামের পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। (এটি গত ২৪ ডিসেম্বর ২০১০ এ জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এমপো বাস্তবায়ন ফোরাম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘১০০-১০০ প্রতিনিধিত্বে নারীর গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন হলো একুশ শতকের মন্ত্র’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় পঠিত হয়।)


লেখকবৃন্দ: নূর-উর-নাহার মেরী, মুশতারী বেগম ও লাভলী ইয়াসমিন যথাক্রমে এমপো বাস্তবায়ন ফোরাম বাংলাদেশ এর আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়কদ্বয়। ফোন: ০১৭১৫১০৫৫৪৫; ইমেইল: ampobd@yahoo.com
Read More ... »

দূর্বলতার বেড়াজালে ‘উপজেলা’র অস্তিত্বই সংকটাপন্ন


মমিনুল ইসলাম মোল্লা
।। ১৬ ডিসেম্বর, ২০১০।।

জেনারেল এরশাদ তাঁর অবৈধ ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ১৯৮২ সালে উপজেলা পরিষদ চালু করেন। পরে ১৯৯১ সালে তা বন্ধ করে দেয়া হলেও ১৯৯৮ সালে আবার চালু করা হয়। তারপর কয়েকবার উপজেলা পরিষদ নিয়ে খুবই দূর্বল আইন প্রণীত হয়। ফলে পরিবর্তমান সময় ও জনগণের প্রকৃত চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার প্রতি খেয়াল না রেখে এবং গণতন্ত্রের ভিত হিসেবে স্বশাসিত, স্বাবলম্বী উপজেলা সরকার ব্যবস্থা চালু না করে একে একটি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করে এখনো বহাল রাখা হয়েছে। এ জন্য কেউ কেউ একে ‘মকাল ফল’ বলেও আখ্যায়িত করছেন।

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তীকালে উপজেলা পরিষদের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানগণ অসন্তুষ্ট হয়। তাই তারা আন্দোলনমুখী হয়। সম্প্রতি তারা ১০ দফা দাবী পূরণ না হলে অমরণ অনশন করার হুমকি দেয়। তাদের দাবীগুলোর মধ্যে রয়েছে, উপজেলা পর্যায়ে এমপিদের জন্য রাখা উপদেষ্টার পদ দ্রুত বিলুপ্ত করা । উপজেলা আইনের অসঙ্গতিপূর্ণ অংশ বাতিল, বিভিন্ন কমিটিতে ইউএনওর সভাপতির পদ বাতিল, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণের সিদ্ধান্ত বাতিল ইত্যাদি। সরকার উপজেলা পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কার্পণ্য করলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার সূচীত অশুভ ধারায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে খুবই সচেতন বলে মনে হয়! 

প্রত্যেক উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য একটি করে খুবই দামী গাড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রথম পর্বে কতগুলো গাড়ি আনা হয়। দ্বিতীয় পর্বে ২১১টি গাড়ি আনা হচ্ছে। প্রতিটি গাড়ির দাম প্রায় ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, উপজেলা পরিষদের আয় কত? এর হিসেব না করেই কোটি কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে কার স্বার্থে? এতে কি জনসাধারণের কোনও উন্নয়ন হবে? চেয়ারম্যান সাহেব কি গাড়িতে চড়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে জনসাধারণের খোঁজ খবর নিতে পারবেন? উপজেলা সদর থেকে প্রতিটি গ্রামে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় এমন কয়টি উপজেলা রয়েছে? তাহলে এত দামী গাড়ি দেয়া হচ্ছে কার স্বার্থে? যদি উপজেলা পরিষদের নিজস্ব আয় দিয়ে গাড়ি কেনার নিয়ম করা হতো তাইলে হয়তো কোনও কোনও চেয়ারম্যান বাই সাইকেলও কিনতে পারতেন না। ১৯৯৮ সালের আইন অনুযায়ী পরিষদের আয়ের উৎস ছিল, হাট-বাজার, হস্তান্তরিত জলমহাল, ও ফেরিঘাট ইজারা, ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানার উপর ধার্যকৃত কর; নাটক, থিয়েটার, সিনেমা ও যাত্রার উপর কর; রাস্তা আলোকিতকরণের উপর কর, মেলা, প্রদর্শনী ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের উপর কর। ইউপি কর্তৃক আদায়কৃত কর বহির্ভূত ব্যবসা, বৃত্তি, ও পেশার উপর ধার্যকৃত কর, জমি বেচা-কেনার রেজিস্ট্রেশনের ফিসের ১% এবং আদায়কৃত ভুমি উন্নয়ন করের ২% এবং সরকার কর্র্তৃক নির্ধারিত কর, রেইট, টোল, ও ফিস। গবেষণায় প্রকাশ, উপজেলা পরিষদ এসব উৎস থেকে অর্থ আদায় করে নিজেদের বেতন-ভাতা, চা-নাস্তা খরচ ইত্যাদি বহন করাই সম্ভব হবে না; তাছাড়া, এসব উৎস থেকে উপজেলার জন্য কর আদায়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা, কেননা এই প্রতিষ্ঠানদ্বয়ও এসব উৎস থেকে কর আদায় করে থাকে। তাইলে, প্রশ্ন হচ্ছে, উপজেলার সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজ কিভাবে পরিচালিত হবে? সেবা ও উন্নয়ন কাজ না থাকলে জনগণ উপজেলা পরিষদই চাইবে কেন? কাজ ও অর্থ থাকলেই তো উপজেলা পরিষদের প্রয়োজন থাকবে; অবৈধ ক্ষমতা প্রলম্বিত করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে তো উপজেলা পরিষদের আর কোনও প্রয়োজন নেই, কেননা এখন তো অবৈধ শাসক ক্ষমতায় নেই। 

তবে উপজেলাকে কার্যকর করতে হলে আগে উপজেলা আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হলে একটি সমন্বিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা আগে ঠিক করতে হবে; আগে স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ইউনিট ঠিক করতে হবে; কারণ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ইউনিটের মাধ্যমে যেসব কাজ করা সম্ভব নয় সেসব কাজ মধ্যবর্তী ইউনিটকে দিতে হবে। সেজন্য মধ্যবর্তী ইউনিট হিসেবে উপজেলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা তাও বিবেচনায় নিতে হবে। প্রয়োজন থাকলে এর ক্ষমতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে; আর প্রয়োজন না থাকলে উপজেলাকে বিলুপ্ত করে দিতে হবে। উপজেলায় করারোপ ও আদায় উৎসাহিত এবং আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক উপজেলার ১০০% সিস্টেম কস্ট (যেমন- চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সদস্যদের সম্মানিভাতা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, যানবাহন ক্রয়, মেরামত, সংরক্ষণ ও জ্বালানী, টেলিফোন বিল, বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল, প্রতিদিনকার আবশ্যকীয় খরচ ইত্যাদি) ও বেশীরভাগ উন্নয়ন ও সেবামূলক কস্ট অবশ্যই নিজস্ব আয় থেকে ব্যয় করার বিধান সংযোজন করতে হবে। বর্তমানে চেয়ারম্যানদের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের বেতন সাড়ে সাত হাজার টাকা প্রদানের কথা রয়েছে। আবার দুঃখজনক হলেও সত্য অধিকাংশ চেয়ারম্যান ঢাকায় অবস্থান করেন। তাদের চাকুরি পূর্ণকালীন না হওয়ায় তারা এলাকায় না থেকেও পার পেয়ে যাচ্ছেন! দূরে অবস্থান করায় জনগণ তাদেরকে কাছে পান না। তাই উপজেলা চেয়ারম্যানদের পদকে পূর্ণকালীন করা প্রয়োজন। চেয়ারম্যানদের অপসারণের ব্যাপারে জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল ২০১০ নামে বিলটি পেশ করা হয়েছে। এ বিলের ১৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া ৩টি সভায় অনুপস্থিত থাকলে, রাষ্ট্র পরিপন্থী বা নৈতিক স্খলনের কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে, অসদাচারণ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত কারণে দোষী সাব্যস্ত হলে, উপজেলার সম্পত্তি আত্মসাৎ করলে, সরকার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে পারবে। এ আইনটির ব্যাপারে চেয়ারম্যানদের ঘোর আপত্তি রয়েছে। তবে অপসারণের নিয়মটি নতুন নয়। এটি আগেও ছিল বলে জানা যায়। 

সবশেষে বলা যায়, অবৈধ ক্ষমতায় সৃষ্ট উপজেলা ব্যবস্থার প্রচুর দূর্বলতা দিন দিন জনগণের সামনে উন্মোচিত হতে থাকায় এর অস্তিত্বই সংকটাপন্ন; তাছাড়া স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ইউনিট (বিভাগ অথবা জেলা) এবং সর্বনিম্ন ইউনিট (ইউনিয়ন, পৌরসভা ও নগর কর্পোরেশন) একসঙ্গে কার্যকর হলে মধ্যবর্তী ইউনিট হিসেবে উপজেলার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু থাকবে তা নিয়ে অনেকের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। আর আরও বড় বিষয় হল, জনগণ সর্বোচ্চ ইউনিট, মধ্যবর্তী ইউনিট ও সর্বনিম্ন ইউনিটের জন্য কর দিতে রাজী হবার আলামত একেবারেই দৃশ্যমান নয়। তাই উপজেলাকে একটি সমন্বিত গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের অংশ হিসেবে রাখতে হলে, আগে স্থানীয় সরকারের একটি সমন্বিত স্তরগত নকশা গ্রহণ করা খুবই জরুরী। এই স্তরগত নকশা গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনের নিরিখে উপজেলা হয়তো থাকবে, হয়তো থাকবে না। ঠিক যেমন মোহ ভংগের মধ্যদিয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বনির্ভর গ্রাম সরকার, পল্লী পরিষদ, গ্রাম সভা, গ্রাম পরিষদ, গ্রাম সরকার, ওয়ার্ড সভার বিলুপ্তি ঘটেছে। তাই তো বলি, আর বিলম্ব নয়, যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় সরকার গবেষক ও সিডিএলজি’র নির্বাহী পরিচালক আবু তালেব প্রণীত ‘গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা’টি পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হোক। 


লেখক: প্রভাষক, সাংবাদিক ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের জন্য ক্যাম্পেনার, এলাহাবাদ ইউনিয়ন, চট্রগ্রাম বিভাগ, সেলফোন: ০১৭১১-৭১৩২৫৭ ইমেইল: maminmollah@yahoo.com
Read More ... »

মুক্তমত


[পড়ার জন্য লেখার নামে ক্লিক করুন]


* ১০০-১০০ প্রতিনিধিত্বে নারীর গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন চাই--নূর-উর-নাহার মেরী, মুশতারী বেগম ও লাভলী ইয়াসমিন
* দূর্বলতার বেড়াজালে ‘উপজেলা’র অস্তিত্বই সংকটাপন্ন -- মমিনুল ইসলাম মোল্লা
Read More ... »
Widget By Devils Workshop
 

আজকের চাঁদ

CURRENT MOON

© 2009-2010 shibcharsangbad | Design by: Md. Abul Hossain Miah

^ উপরে আসুন